অভিমানের দেয়াল - পর্ব ৩

অভিমানের দেয়াল

পর্ব ৩: অভিমানের দেয়াল

শহরের আকাশ ধূসর। দিন যত এগোয়, রোদ তত মলিন হয়ে আসে। রাফি আর রিতুর জীবনে যেন সেই ধূসরতারই প্রতিচ্ছবি—একদিকে ভালোবাসার উষ্ণতা, অন্যদিকে অনিশ্চয়তার দীর্ঘ ছায়া। হাসপাতালের ধারাবাহিকতা, ওষুধের গন্ধ, রাতজাগা নার্সদের পায়ের শব্দ—সবকিছু মিলিয়ে রাফির দিনগুলো একরকম যান্ত্রিক হয়ে গেছে। আর রিতুর দিনগুলো চলছে দুটি মেরুর টানে—একদিকে মায়ের অপ্রসন্ন দৃষ্টি আর দায়িত্বের বোধ, অন্যদিকে রাফির হাতটা ধরে রাখার অন্তহীন ইচ্ছে।

এই সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলো বার্ষিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসব। রিতু সাহিত্য কমিটির প্রতিনিধি; কবিতা আবৃত্তি, ছোট গল্প পাঠ, বইমেলা—সবকিছুতেই তার ভীষণ আগ্রহ। কিন্তু রাফি? সে তো হাসপাতাল আর টিউশনের ফাঁকে কষ্টেসৃষ্টে ক্লাস করছে। রিতু চায় রাফি কমপক্ষে একদিন আসুক, তার লেখা কবিতা শুনুক, উৎসবের ভিড়ে দাঁড়িয়ে গ্লাসে চা নিয়ে মৃদু হাসুক, আর শুধু বলুক—“আমি আছি।”


উৎসবের দিন, না-থাকার অভিমান

উৎসবের প্রথম দিন। ক্যাম্পাস সাজানো রঙিন কাপড়ের বুনটে। গাছের ডালে আলো ঝুলছে। স্টলে বই, পাশে গানের মাইক্রোফোন, আবৃত্তির মঞ্চ—চারদিকে উৎসবের আমেজ। রিতু আজ নেভি-ব্লু শাড়ি পরেছে; খোঁপায় কয়েকটি সাদা ফুল। চোখে একটি পাতলা কাজল, ঠোঁটে হালকা রং—সাজে কোনো বাড়াবাড়ি নেই, তবু তাকে দেখতে যেন লাগছে অন্যরকম। সে চায় রাফি দেখুক—তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি যে আজ নিজের স্বপ্নের মঞ্চে দাঁড়াবে।

বিকেলের দিকে রিতু মেসেজ করল—“আজ ছয়টার আবৃত্তি সেশন। পারবে আসতে?” কয়েক মিনিট পর উত্তর—“চেষ্টা করব।” “চেষ্টা” শব্দটা রিতুর বুকের ভেতর হালকা খচখচে ব্যথা তৈরি করল। সে জানে, রাফি চেষ্টা করে। কিন্তু “চেষ্টা” মানে প্রায়ই “না-পারা” হয়ে যায়। সে মনকে বুঝিয়ে বলল—আজ আসবেই, আসতে হবে।

মাইকে নাম ডাকলো—“রিতু সেন, ‘ভালোবাসা এবং ভীষণ হৃদয়’ কবিতা পাঠ।” হলভর্তি লোকজন; সামনের সারিতে সাহিত্য বিভাগের শিক্ষকরা। রিতু মঞ্চে উঠে দাঁড়াল। তার বুকের ভেতর কাঁপুনি—উত্তেজনা নয়, অপেক্ষা। চোখের কোণে ভিড় স্ক্যান করল—রাফি? না, নেই। দরজার পাশে? না। বারান্দার ছায়া? না।

তার কণ্ঠ শুকনো হয়ে আসে। তবু সে শুরু করে—“ভালোবাসা ঠিক ভোরের মতো—” কথা আটকে যায়। কিছু সেকেন্ড নীরবতা। হলের মাঝখানে কেউ ফিসফিস করে—“নার্ভাস?” আরেকজন বলে—“পানি দাও।” একজন ভলান্টিয়ার এগিয়ে দেয় পানি। রিতু চুমুক দেয়, গভীর শ্বাস নেয়, তারপর চোখ বন্ধ করে প্রথম চরণটা আবার বলে। কণ্ঠ ধীরে ধীরে স্থির হয়; আবৃত্তির মাঝখানে তার চোখে জল এসে যায়—কিন্তু সে কাঁদে না, কেবল কণ্ঠে উত্তাপ মেশে। শেষে সবাই হাততালি দেয়; দাঁড়িয়ে হাততালি দেয় দু-একজন। তবু রিতুর ভিতরে কোথাও একটা ফাঁকা জায়গা থেকে যায়—যেখানে একটুখানি হাসি আর দুটি শব্দ দরকার ছিল—“আমি এসেছি।”


অপরাধবোধ আর অজুহাতের ভার

ঐ সময়টাতেই রাফি ছিল হাসপাতালে। হঠাৎ মায়ের ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়েছিল। ডাক্তার ডেকেছিল; রিপোর্ট আনতে বাইরে ছুটতে হয়েছিল। সন্ধ্যার ছয়টায় তার ফোনে রিমাইন্ডার বাজল—“রিতুর আবৃত্তি।” সে ব্যাগ থেকে ফোন বের করল, তারপর একসঙ্গে তিনটে কল—ল্যাব, ফার্মেসি, মামা। সময় ফসকে গেল; ছয়টা পেরিয়ে সাতটা, তারপর সাড়ে সাতটা। ফোন হাতে নিয়ে রাফি গুনল—তিনবার কল এসেছে রিতুর। সে ধরতে পারেনি।

রাতে সে মেসেজ দিল—“আমি দুঃখিত। আমি আসতে পারিনি।” কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই—“হুম।” এই “হুম” শব্দটা যে কত ভারী হতে পারে, রাফি বুঝে গেল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল; নিজের ওপর রাগ হলো; পরিস্থিতির ওপর আরও বেশি।


নতুন একটি নাম—আরিয়ান

উৎসবের দ্বিতীয় দিন। সাহিত্য কমিটির মেন্টর হিসেবে এসেছেন বিভাগীয় সাবেক ছাত্র, এখন নামী প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক—আরিয়ান মাশরুর। স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী, কথা বলতে জানে। তরুণদের গল্প শুনে নোট নেয়; কে কী লিখছে, কোনটা থেকে বই বের হতে পারে—সব জানার চেষ্টা। রিতুর আবৃত্তি শুনে সে এগিয়ে এল—“তোমার কণ্ঠ খুব পরিণত। কবিতার আবেগ ধরো ভালো। নিজের লেখা আছে?”

রিতু একটু ইতস্তত করে তার ডায়েরি থেকে কয়েকটি কবিতা দেখাল। আরিয়ান মন দিয়ে পড়ল; তারপর বলল—“তোমার ভাষা নির্মল। খুব বেশি অলংকার নেই, কিন্তু সোজা যাও। এটা আমার পছন্দ। চাইলে আমাদের ‘নতুন লেখক’ সিরিজে তোমার একটা ছোট কবিতা-পুস্তক করা যায়। সময় নাও, কিন্তু লিখো। আমি গাইড করব।”

এই অফার রিতুকে উচ্ছ্বসিত করল, আবার ভয়ও ধরাল। বই! সত্যি কি সম্ভব? সে হেসে বলল—“ধন্যবাদ, ভাবিনি কেউ এমন বলবে।” আরিয়ান বলল—“বিশ্বাস করো, তুমি পারবে। আর, কাউকে তোমার স্বপ্ন থেকে দূরে রাখবে না।” কথাটা বলার সময় তার চোখ নিঃশব্দে রিতুর ভেতরের সন্দেহ-আত্মবিশ্বাসের দ্বন্দ্বটাকে যেন দেখে ফেলল।


ভুল বোঝাবুঝির প্রথম উসকানি

সন্ধ্যায় রিতু ফোন করল রাফিকে—“আজ একজন এডিটর এসেছিল। আমার কবিতার বই করার কথা বলেছে।” ওপাশ নিস্তব্ধ। তারপর রাফি বলল—“দারুণ তো! খুব ভালো।” কণ্ঠে উৎসাহ আছে, কিন্তু ক্লান্তিও আছে। রিতু শুনল। সে অপেক্ষা করল—রাফি কি বলবে, “কাল তোমার সাথে বসি, কবিতাগুলো দেখি”? কিন্তু সে বলল—“মাকে ওষুধ খাওয়াতে হচ্ছে। রাতে কথা বলি?” “হুম, ঠিক আছে,” রিতুর গলা একটু ঠান্ডা। “মন খারাপ করো না প্লিজ,” রাফি বলে। “আমি করছি না,” রিতু উত্তর দিলেও তার কণ্ঠে অভিমান জমতে থাকে।

পরদিন ক্যাম্পাসে আরিয়ান আবার এল; রিতুকে নিয়ে স্টলের পাশে বসে একটু সময় কথা বলল। ওই মুহূর্তে হঠাৎ ক্লাস থেকে বের হয়ে রাফি স্টলের ভিড়ে তাকাতেই দেখল রিতু হাসিমুখে কথা বলছে; টেবিলের উপর খোলা ডায়েরি, আরিয়ান তার দিকে নোট দিচ্ছে। দৃশ্যটা রাফির চোখে যা দেখাল—“ঘনিষ্ঠতা।” যা আসলে ছিল—“পেশাদার দিকনির্দেশনা।”

রাফির ভেতরে আটকে থাকা ক্লান্তি, অপরাধবোধ আর নিজের অক্ষমতার চাপে হঠাৎ একটা তিক্ত ঢেউ ওঠে। সে এগিয়ে গিয়ে বলল—“হাই।” রিতু মুখ তুলে হাসল—“এই তো! চলো, এডিটর আরিয়ান ভাই—এটা রাফি।” আরিয়ান ভদ্রভাবে হাত বাড়াল—“হাই রাফি, ইউ মাস্ট বি প্রাউড। রিতু খুব ভালো লেখে।” রাফি ভান করে হাসল—“হ্যাঁ… ধন্যবাদ।” মনে হলো, এ কথাটা যেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলা—“প্রাউড”—যখন সে এক সন্ধ্যাতেও পাশে থাকতে পারেনি। “প্রাউড” শব্দটা তার কাছে কেমন কর্কশ হয়ে উঠল।


ক্ষুদ্র বাক্য, বড় দূরত্ব

সেই রাতেই ওয়াটসঅ্যাপে ছোট এক ঝগড়া শুরু হলো। রাফি: “তোমার বই হলে ভালো। কিন্তু… সাবধানে থেকো।” রিতু: “মানে?” রাফি: “মানে, সবাই সবসময় শুভাকাঙ্ক্ষী হয় না।” রিতু: “তুমি কি কারও প্রতি সন্দেহ করছ?” রাফি: “না, আমি কেবল… বললাম।” রিতু: “আমি কি এতটা বোকার মতো? আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারি, রাফি।” রাফি: “আমি তোমার খেয়ালই তো রাখতে চাই…” রিতু: “খেয়াল রাখার প্রথম নিয়ম বুঝে নেওয়া। তুমি তো সময় দাও না, বোঝোও না।” —“সরি।” —“থাক।” দুটি শব্দ—“সরি” আর “থাক”—রাতের দিকে লম্বা হয়ে যায়। কথোপকথন থেমে যায়; তাদের মাঝখানে চুপচাপ দাঁড়ায় অভিমানের দেয়াল।


অর্থের সংকট, স্বপ্নের দাম

কদিন পর রাফির এক বড় টিউশন চলে যায়—ছাত্রের পরিবার অন্য এলাকায় চলে গেছে। মাসের শেষে মায়ের ওষুধ, বাড়িভাড়া, নিজের খরচ—সব মাথায় নিয়ে সে একদিন রাতে হিসেব করে দেখে: ঘাটতি। এমন এক ঘাটতি, যা তাকে বাধ্য করে আরও দুইটা পার্টটাইম কাজ খুঁজতে। পড়ার বই খোলা থাকে, চোখে ঘুম নেমে আসে; তার মাঝেই টেবিলের উপর পড়ে থাকে একটি পুরোনো চিঠি—রিতুকে লেখা প্রথম চিঠি। “আমি সারাজীবন হাত ছাড়ব না”—লাইনটা পড়তে পড়তে তার মনে প্রশ্ন ওঠে—হাত রাখার মতো সময়ই তো নেই।

রাতে রিতু মেসেজ পাঠায়—“কাল বিকেলে আরিয়ান ভাইয়ের সাথে মিটিং। কভার নিয়ে কথা হবে। তুমি পারলে এসো?” রাফি তাকিয়ে থাকে—কাল বিকেলে তার নতুন টিউশনের ডেমো ক্লাস। সে লিখে—“কাল পারব না, রাতে কল করব।” রিপ্লাই আসে—“হুম, ঠিক আছে।” এই “হুম” আরেকবার রাফির বুকের ভিতর পাথরের মতো বসে যায়।


মায়ের শয্যা, ছেলেটির লড়াই

হাসপাতালের এক কোণে রাফির মা চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন—“তুই বিশ্রাম নে, খুব কষ্ট করিস।” রাফি মাথা নাড়ে—“কিছু হবে না, তুমি ভালো হয়ে উঠবে। আমি আছি।” এই “আমি আছি” কথাটা সে রিতুকেও বলতে চেয়েছিল, কিন্তু বারবার তার সময় আর পরিস্থিতি তাকে তা বলতে দেয়নি।

একদিন রাতে মা হঠাৎ বললেন—“রিতু কেমন?” রাফি চমকে উঠল—“আপনি কিভাবে জানলেন?” মা হাসলেন—“তোর চোখে বুঝি না? তুই ভালোবাসিস। তুই যদি কারও হাত ধরিস, তাকে বোঝার চেষ্টা করিস, কষ্টটা ভাগ করিস। মেয়েরা গভীর সমুদ্রের মতো—উপরটা শান্ত, ভেতরে ঢেউ।” রাফি চুপ করে মায়ের হাত ধরল। এই কথা সে মনে রাখল—“বোঝার চেষ্টা করিস।”


অনাহূত পরামর্শ, অপ্রয়োজনে তুলনা

রিতুর মা বইয়ের খবরে একদিন একটু নরম হলেন—“বই করলে খারাপ কি? তবে পড়াশোনা আগে।” পরক্ষণেই প্রশ্ন—“ও ছেলেটা? সে কি তোমার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে? ভবিষ্যতে কষ্ট পেতে হবে না তো?” রিতু থেমে থেমে বলল—“আমরা চেষ্টা করছি।” মা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন—“চেষ্টায় সব হয় না, ভাগ্যও লাগে।” “ভাগ্য” শব্দটা রিতুর কানে চাবুকের মতো লাগে। সে মনে মনে বলে—“আমার ভাগ্য আমি লিখব।” কিন্তু বুকের ভেতর তবু ঢেউ ওঠে—যদি সত্যিই একদিন ভেঙে যায় সব?


একটি ছবি, এক সেকেন্ডে ঝড়

উৎসবের শেষ দিনে প্রকাশনা স্টলের সামনে সবাই ছবি তুলছে। আরিয়ান বলল—“একটা টিম-ফটো লাগে।” সবাই দাঁড়াল; রিতু মাঝখানে। আরিয়ান হাত ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল; ফটোগ্রাফার বলল—“কাছাকাছি হন।” ফ্রেমে সবাই একটু সরে এলো; ছবিতে মনে হলো আরিয়ান আর রিতুর দূরত্ব কম। সন্ধ্যায় সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠল। ক্যাপশন—“New voices, new books.” রাতেই ছবিটা রাফির চোখে পড়ল। সে কিছুই বলতে পারল না—শুধু বুকের ভেতরে নিঃশব্দ গরম ঢেউ। তার মাথায় তুলনা—“আমি সেখানে নেই; আরেকজন আছে।” যদিও ছবিটা ছিল টিম-ফটো—কিন্তু হৃদয় যুক্তি মানে না সবসময়।

রাতে রাফি লিখল—“দেখলাম ছবি। খুব ভালো লাগল তোমাকে।” রিতু হেসে রিপ্লাই দিল—“থ্যাঙ্কস 🙂” রাফি যোগ করল—“আরিয়ান ভাইয়ের সাথে তো খুব ব্যস্ত ছিলে।” কিছুক্ষণ পরেই রিপ্লাই—“তুমি কি বোঝাতে চাইছ?” —“না, বললাম।” —“শুধু বলার জন্য বলো না। তুমি যদি আমার ওপর ভরসা না করো, তাহলে কথা বলে লাভ নেই।” —“আমি ভরসা করি। কিন্তু…” —“‘কিন্তু’ মানেই অবিশ্বাসের শুরু।” রাফি অনেক কিছু লিখতে চাইল—নিজের অক্ষমতা, ক্লান্তি, ভয়—কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু লিখল—“সরি।” রিতু লিখল—“কাল কথা বলি।”


সামনাসামনি, তবু দূরত্ব

পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের নির্জন বটগাছের নিচে দেখা। দুপুরের রোদ পাতার ফাঁক দিয়ে ছায়া-আলো ফেলে। রিতু বলল—“তুমি আমাকে বোঝো, কিন্তু বিশ্বাস করোনি। তুমি জানো আমি কেমন। তুমি জানো আমি কোনো ভুল করব না। তবু ছোট ছোট কথায় তুমি সন্দেহ করলে।” রাফি মাথা নিচু করল—“আমি… ভয় পেয়েছিলাম।” “কার?” “তোমাকে হারাবার।” “কিন্তু ভয় দেখিয়ে ভালোবাসা ধরে রাখা যায় না, রাফি। ভালোবাসা মানে ভরসা। তুমি আমার পাশে না থাকতে পারলে, অন্তত ভিতরে পাশে থেকো। বারবার ‘সাবধান’ বলা মানেই তুমি আমাকে দুর্বল ভাবো।” রাফি কষ্ট পেয়ে বলল—“আমি তোমাকে দুর্বল ভাবি না। আমি নিজেকে দুর্বল ভাবি।” কথাটা বলেই তার চোখ ভিজে উঠল। রিতুর চোখ নরম হলো। সে ধীরে বলল—“তাহলে নিজেকে শক্ত করো। আমি চাই তুমি দাঁড়াও, লড়ো, বড় হও। আমি পাশে থাকি।” “আমি চেষ্টা করছি।” “চেষ্টা আর ফলাফল—দুটো আলাদা কথা। তবু… আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। কিন্তু আমার স্বপ্ন থামাব না।” “থামিও না,” রাফি বলল, “আমি চাই তুমি উড়ো।” “তাহলে আমাকে উড়তে দাও।” “দিচ্ছি।” দুটো শব্দ, দুটি ইচ্ছে, দুটি সমান্তরাল পথ—যেখানে চলার মানে দূরে সরে যাওয়া নয়, পাশাপাশি থাকা। কিন্তু জীবনের রাস্তা সবসময় সমান্তরাল থাকে না।


একটি সুযোগ—একটি পরীক্ষাকাল

কয়েকদিন পরে প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে ই-মেইল এল—রিতুকে তিন মাসের ক্রিয়েটিভ ইন্টার্নশিপ অফার। শর্ত: সপ্তাহে চার দিন অফিসে থাকতে হবে, কয়েকটি বুক-ইভেন্টে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। ছোট একটা স্টাইপেন্ড আছে—কিন্তু এর চেয়ে বড় বিষয়, তার লেখাকে গড়ে ওঠার সুযোগ। রিতু উচ্ছ্বসিত হয়ে রাফিকে জানাল—“দেখো! ইন্টার্নশিপ!” রাফি মুগ্ধ গলায় বলল—“কী দারুণ!” কথার পরেই তার মাথায় হিসেব—রিতুর সময় আরও টাইট; দেখা করার সময় কমবে; কিন্তু যদি সে স্বপ্ন পূরণ করে, তাহলে তো সেটাই বড় কথা। সে বলল—“আমি খুব খুশি।” রিতু একটু থেমে বলল—“তুমি সত্যিই?” “হ্যাঁ।” “তাহলে একটা কথা দাও—তুমি আর সন্দেহ করবে না।” “দিচ্ছি,” রাফি বলল, “আমি শুধু… মাঝে মাঝে ভয় পাই।” “ভয় পেলে আমার চোখের দিকে তাকাবে। সেখানে তোমার জন্য ভরসা আছে।” এই কথাগুলোতে দুজনের বুকেই একটা শান্তির পাখি ডানা মেলে।


অকস্মাৎ ঝড়—অনিবার্য সংঘর্ষ

সবকিছু যখন একটু স্থিতি পেতে শুরু করেছে, তখনই জীবনের নাটকীয়তা আবারও মুখ তুলল। এক সন্ধ্যায় রিতুর ফোনে আসে একটি ম্যাসেজ—আফটার-ইভেন্ট মিটআপ; কফিশপে প্রকাশনা-টিমের সাথে ছোট রিভিউ সেশন। রিতু যায়। টিমের মাঝখানে হাসি-আড্ডা, বই, কফির গন্ধ। আরিয়ান পেশাদার ভঙ্গিতে বলল—“রিতু, তোমার কবিতার দ্বিতীয় অংশের ভাষা আরও ধারালো করো। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখো।” রাত সাড়ে দশটা বাজে; সেশন লম্বা হয়ে যায়। রিতু মাকে মেসেজ করে—“দশটা ত্রিশে ফিরছি।” মা শুধু উত্তর দেন—“ঠিক আছে।” এদিকে রাফি নতুন টিউশনের পরে বাড়ি ফিরছে; মাথা ধরেছে। সে রিতুকে কল দেয়—অপেক্ষা করে—কল কেটে যায়। আবার কল—বিজি। তৃতীয়বার—সুইচড টু ওয়েটিং। তার মাথায় আবার আঁধার নেমে আসে। “আবারো আমি নেই, আর অন্যরা আছে”—এই ভুল চিন্তা নিশ্বাস নেয়।

রাত এগারোটায় রিতু রাইড নিয়ে ফিরছে। হঠাৎ থামতে হয় এক জায়গায়—ক্যাশ কাউন্টের ভিড়, পেমেন্ট ক্লিয়ার করতে দেরি। ঠিক তখনই রাস্তার ওপাশে রাফি; সে হাসপাতালে কিছু ওষুধ নিতে বেরিয়েছিল। দূর থেকে দেখে একজন মেয়ের ছায়া—চিনতে পারে—রিতু। পাশেই আরিয়ান, টিমের দুজন। হাসাহাসি। রাফি দাঁড়িয়ে থাকে; এগিয়ে যেতে চায়, কিন্তু থেমে যায়—“কাজের জায়গায় বিব্রত করব?” তারপর দাঁড়িয়ে থেকে ফোন করে—রিসিভ হয় না। মুহূর্তেই মন খারাপ আবার সন্দেহের কালি ছিটায়।


বিস্ফোরণ—যা বলা উচিত ছিল না

রাত সাড়ে এগারোটায় অবশেষে তারা কথা বলে। রাফি (রুক্ষ কণ্ঠে): “কোথায় ছিলে?” রিতু: “টিম-রিভিউ। মেসেজ করেছিলাম।” “তুমি জানো, আমি চিন্তা করি।” “আমি তো জানাই।” “কাদের সাথে ছিলে?” “এটা কি জেরা?” “না… মানে… আমি—” “তুমি আবার শুরু করেছ, রাফি। আমি বলেছিলাম, ‘সন্দেহ করো না’।” “তুমি বুঝবে না, আমি—” “আমি বুঝি। তুমি শুধু আমাকে বুঝো না।” “তুমি কি… তাকে—” “স্টপ!” নীরবতা। রিতুর কণ্ঠ ভেঙে যায়—“এভাবে চললে আমি পারব না।” রাফির মাথা ঘুরে ওঠে—“মানে?” “মানে, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু যদি আমার প্রতিটি পদক্ষেপে সন্দেহ এসে দাঁড়ায়—এই সম্পর্ক টিকবে না। আমি আমার স্বপ্ন থামাব না।” রাফি ধপ করে বসে পড়ে, দেয়ালের সাথে মাথা লাগায়—“আমি… আমি ঠিক করতে পারিনি। আমি শুধু ভয় পাই। আমি তোমাকে হারাতে চাই না।” রিতু স্তব্ধ। তারপর ধীরে বলে—“তাহলে ধরে রাখো—সন্দেহ নয়, ভরসা দিয়ে।” “আমি চেষ্টা করব।” “চেষ্টা নয়, সিদ্ধান্ত।” লাইনটা বাতাসে ঝুলে থাকে। কল কেটে যায়।


স্ব-সম্মান আর স্ব-উন্নতির শপথ

সেই রাতে রাফি নিজের কাছে শপথ নিল—সে বদলাবে। সে লিখল একটি পরিকল্পনা— ১) প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা নিজের পড়ার জন্য। ২) টিউশনের পাশাপাশি একটি অনলাইন কাজ—কন্টেন্ট রাইটিং—ট্রাই করবে, যাতে আয়ের পথ আরেকটা থাকে। ৩) মায়ের নিয়মিত চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাসের তালিকা, অ্যালার্ম সেট। ৪) সপ্তাহে দুই দিন রিতুর সাথে নির্ধারিত সময়—“ডেট” না হোক, “দেখা”—কিন্তু সময় নির্দিষ্ট। ৫) এবং সবচেয়ে বড় কথা—নিজের ভয়কে চিহ্নিত করে তার সাথে কথা বলা: “আমি এখন ভয় পাচ্ছি”—এই স্বীকারোক্তি করা, সন্দেহসুরে অভিযোগ না তোলা। কাগজে পরিকল্পনা লিখে সে দেয়ালে টেপ দিয়ে লাগাল। মনে হলো তার ভিতরে একটা আলো জ্বলে উঠছে—ক্ষীণ কিন্তু স্থির।


সমঝোতার আলো, পুনর্মিলনের স্পর্শ

দুদিন কথা কম। তৃতীয় দিন দুপুরে ক্যাম্পাসের পুরোনো লাইব্রেরির পেছনের বেঞ্চে দেখা। রোদ গাছের পাতায় ফিল্টার হয়ে পড়ছে। রাফি তাকিয়ে বলল—“আমাকে মাফ করো।” রিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলল—“আমি চাই তুমি আমাকে বুঝো, আমাকে বিশ্বাস করো। তোমার ভিতরের ভয় আমি বুঝি—কিন্তু সেই ভয় আমাকে আঘাত করে।” “আমি লিখে রেখেছি,” রাফি জিপ থেকে ভাঁজ করা কাগজ বের করল—“এটা আমার প্ল্যান। আমি যদি ব্যর্থও হই, আমি লুকাব না। আমি তোমার কাছে এসে বলব—আমি ভয় পেয়েছি। কিন্তু সন্দেহ করব না।” রিতু কাগজটা পড়ল; তার চোখে ভেজা উজ্জ্বলতা। সে ধীরে রাফির হাত ধরল—“এটাই তো চাই। আমি তোমার পাশে আছি।” মুহূর্তটা নরম, উষ্ণ। পাতার ফাঁক দিয়ে আলো তাদের আঙুলে এসে পড়ে; সেই আলোতে দূরত্ব কিছুটা গলতে থাকে।


শেষ বাঁকে নতুন সংকেত

দিন কয়েক পরে রিতুর হাতে আসে একটি ই-মেইল—একটা জাতীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় তার লেখা শর্টলিস্ট হয়েছে। ফাইনাল রিডিং হবে ঢাকার একটি আর্ট ক্যাফেতে; বাছাই হওয়ার খবর মিডিয়ায় যাবে। রিতু খবরটা রাফিকে দিল; রাফি উচ্ছ্বসিত—“আমি থাকব।” সেদিন রাতে মায়ের জ্বর ওঠে। ডাক্তার বলে—“সতর্ক থাকুন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ।” দুটি দিন—একদিকে প্রতিযোগিতা, আরেকদিকে মায়ের শয্যা। রাফি দ্বিধায় পড়ে। সে রিতুকে মেসেজ করে—“আমি… হয়তো শেষ পর্যন্ত আসতে না-ও পারি।” ওপাশ থেকে একটু দেরিতে রিপ্লাই—“আমি বুঝি। কিন্তু এটা আমার জীবনের বড় মুহূর্ত। তুমি না এলে খুব কষ্ট পাব।” রাফি বুক চেপে ধরে। সে এক হাতে মায়ের কপালে বরফের পানির প্যাক চেপে রাখে, অন্য হাতে চেপে ধরে ফোন। রাতভর তার চোখে ঘুম নেই। সকাল হলে মায়ের জ্বর একটুখানি নামে। রাফি মামাকে ডাকে—“আপনি থাকুন, আমি দু’ঘণ্টার জন্য বের হই।” মামা মাথা নাড়ে—“যা, ফিরে আয় দ্রুত।”

ক্যাফেতে পৌঁছতে পৌঁছতে রাফির শার্টে ঘাম, কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। মঞ্চের সামনে ভিড়; রিতুর নাম ঘোষণার একটু আগে সে ঢোকে। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলছে—কী করবে, কোথায় বসবে—ঠিক তখনই মঞ্চে আসে রিতু। সে রাফিকে চোখের কোণে দেখতে পায়। এক সেকেন্ডের হাসি—মৃদু, তবে গভীর। সেই হাসি রাফির মধ্যে ভয়কে সাময়িকভাবে তাড়িয়ে দেয়।

কবিতা শেষ হয়; হাততালি। বিচারকেরা মন্তব্য করে—“ভাষা অর্থময়, সংযমী। ব্যক্তিগত শোককে সার্বজনীনে তোলার চেষ্টা আছে।” রিতুর চোখে জল চিকচিক করে। অনুষ্ঠান শেষে বাইরে বেরিয়ে রাফির দিকে এগিয়ে এসে বলে—“তুমি এসেছ।” রাফি নিঃশ্বাস ফেলে—“হ্যাঁ। আমি সবসময় চেষ্টা করব আসতে, যতটা পারি। যদি কোনোদিন না-ও পারি, আমি বলব—কেন পারিনি। কিন্তু সন্দেহ করব না।” রিতু মাথা নেড়ে মৃদু হেসে বলল—“এটাই তো চাই।” দুজনের মাঝে স্বস্তির উষ্ণতা নেমে আসতে না-আসতেই ফোন কাঁপল—হাসপাতাল থেকে কল—“রোগীর অবস্থায় নতুন জটিলতা—আপনাদের দ্রুত আসতে হবে।”


ক্লিফহ্যাঙ্গার—দুটি ভালোবাসা, একটি সিদ্ধান্ত

রাফির মুখ পাথরের মতো সাদা হয়ে যায়। সে রিতুর দিকে তাকায়—“আমাকে যেতে হবে।” রিতু হাত চেপে ধরে—“আমি চলি তোমার সাথে।” “না, তুমি… তোমার ইভেন্ট—” “আজকের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট তুমি।” কথাটা শুনে রাফির চোখ ভিজে ওঠে। দুজনেই দ্রুত বেরিয়ে আসে। রাস্তায় নেমে তারা একই রাইডে ওঠে; শহরের আলো পেছনে ছুটে যায়। রাস্তায় বসে রাফি ফিসফিস করে—“যদি… কিছু হয়ে যায়?” রিতু শক্ত করে হাত ধরে—“আমরা একসাথে আছি।” তারপরও রাফির মনে নীরব প্রশ্ন—“আমি কি কখনো তোমাকে তোমার স্বপ্ন থেকে টেনে নামাবো?” সে নিজেকে বলল—“না। আমি তাকে উড়তে দেব, আমিও উড়ব—নিজের লড়াই জিতে। আমরা দুজনেই আকাশের দুই ডানার মতো হব—একসাথে।”

হাসপাতালের দরজায় পৌঁছতেই সেকিউরিটি তাড়াহুড়া করতে বলল। ডাক্তার বাইরে এসে দ্রুত তথ্য দিলেন—“কিছু পরীক্ষা করতে হবে, এখনই।” কাগজ, সিগনেচার, বিল—সব একসঙ্গে। রিতু একপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছে—কলম দেয়, বিল কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ায়, প্রেসক্রিপশনের কপি রাখে। রাফি তাকিয়ে থাকে—যে মেয়েটিকে সে অকারণে সন্দেহ করেছিল, সে আজ তার পাশে পাহাড়ের মতো।

মধ্যরাত। হাসপাতালে করিডরের আলো আরো ফ্যাকাসে। ভেতরে পরীক্ষা চলছে। বাইরে লম্বা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে রাফি আর রিতু—কেউ কথা বলে না; নীরবতারও তো ভাষা আছে। কিছুক্ষণ পর রিতু ধীরে বলে—“আমরা পারব, তাই তো?” রাফি মাথা নেড়ে বলে—“পারব। তবে একটা শর্ত আছে—আমরা একে অপরকে সন্দেহ না করে, ভয়গুলো বলব।” “ঠিক আছে,” রিতু বলল, “এটাই আমাদের চুক্তি।” হঠাৎ ভেতর থেকে নার্স এসে বলল—“অ্যাটেন্ডেন্ট, জরুরি কাগজ!” রাফি ছুটে গেল। রিতু তার ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে চোখ মুছে নিঃশব্দে প্রার্থনা করল—“ভালো করো, ভগবান। এই মানুষটা আমার সাহস।”

ভোরের একটু আগে পরীক্ষার ফল আসে। ডাক্তার বলেন—“ঝুঁকি আছে, তবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কয়েকটি দিন খুব সতর্ক থাকতে হবে।” রাফি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে; চেয়ারে বসে পড়ে। রিতু নিঃশব্দে তার কাঁধে হাত রাখে। এই শান্ত স্পর্শে রাতের অস্থিরতা ধীরে ধীরে গলে যায়।

সেই ভোরে, হাসপাতালের সিঁড়ির কাছে, জানালার বাইরে প্রথম আলো ফুটতে থাকে। পাখিরা খুব ভোরের মতো ডাকে। রাফি বলে—“তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাহস।” রিতু হাসে—“আর তুমি আমার সবচেয়ে বড় নিশ্চিন্তি—যদি তুমি আমার স্বপ্নকে তোমার ভয় দিয়ে মাপো না।” “আমি দেব না,” রাফি বলে, “আমি শিখছি।” “আমিও শিখছি।” ভোরের আলো তাদের চোখে পড়ে; তারা বুঝতে পারে—ভালোবাসা মানে শুধু হাত ধরা নয়, ভয়কে নাম ধরে ডেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া।

তবু গল্প এখানেই শেষ নয়। কারণ জীবনের পরবর্তী বাঁকে অপেক্ষা করছে আরও বড় পরীক্ষা—চাকরির ইন্টারভিউ, বইয়ের প্রকাশ-তারিখের চাপ, পরিবারের অদেখা আপত্তি, আরিয়ানকে ঘিরে নতুন এক গুঞ্জন, এবং সবচেয়ে বড়—নিজেদের ভেতরের অনিশ্চয়তার সাথে শান্ত চুক্তি রাখা। একটি খবর এসে দাঁড়ায়—বিদেশি ফাউন্ডেশনের একটি ক্রিয়েটিভ ফেলোশিপের শর্টলিস্টে রিতুর নাম—মাস ছয়েকের জন্য বাইরে থাকতে হতে পারে। রিতু খবরটা পড়েই তাকায় রাফির দিকে। রাফির চোখে এক সেকেন্ড ঝিলিক—ভয়, বিস্ময়, গর্ব—সব একসাথে। সে ধীরে বলে—“উড়ো।” রিতুর চোখে জল এসে যায়—“তুমি থাকবে?” “আমি থাকব। তোমার অপেক্ষায়—নিজের লড়াইয়ের ভিতরে। কিন্তু একটা কথা…” “বল।” “আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম—ভয়গুলো বলব। তাই বলছি—আমি ভয় পাচ্ছি।” রিতু তার হাত আঁকড়ে ধরে—“আমি শুনছি।” ভোর পুরোপুরি জেগে ওঠে; করিডরের আলোগুলো নিভে যায়। নতুন দিনের শুরুতে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে নতুন সিদ্ধান্তের পাহাড়। তারা তাকিয়ে থাকে। কেউ পিছোয় না।

— (চলবে…)

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post